আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে স্টিল শাটারের পরিবর্তে কাঠের শাটার!
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে স্টিল শাটারের পরিবর্তে কাঠের শাটার ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। শিডিউল অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গত ১ এপ্রিল কাজও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষরিত একটি পত্র দেখিয়ে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার। আশ্রয়কেন্দ্রের ভবনের কাজ প্রায় ২০ ভাগ শেষ হয়েছে।
আলফাডাঙ্গা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২০২০ সালের ১৪ জুলাই কাজটি শুরু হয়। কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের জাটিগ্রাম মমতাজউদদীন মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের এ ভবনটি নির্মিত হচ্ছে। এ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ৩,৫৮,৬৩,২৫৫.৩২০ টাকা। সেখানে চুক্তিমূল্য রয়েছে ৩,২২,৮৪,১০৩.৩৩৯ টাকা। চারতলাবিশিষ্ট আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪০০ জন মানুষ ও গবাদি পশু ১০০টি। ভবনের আয়তন ১২৭৮৮.২৫ বর্গফুট।
এ কাজের তদারকি ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রণব পাণ্ডে। তিনি ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের একজন প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ তাসারফ হোসেন ফরাজী মূল কাজের দায়িত্বে রয়েছেন। এ কাজ করছে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার মেসার্স রেজাউল ফকির জেভি নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রের ভবন নির্মাণকাজে যেখানে স্টিলের শাটার (সেন্টারিং) ব্যবহার করার জন্য শিডিউলে উল্লেখ রয়েছে। সেখানে কাঠের শাটার ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া কাঠের শাটার ব্যবহার করার কারণে মিশ্রিত সিমেন্টের পানি বের হয়ে যায়। কাঠের কারণে ভাইব্রেশন মেশিন ব্যবহার করা যায় না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শিডিউল অনুযায়ী না করার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের লোকজন ও এলাকাবাসী কাজটি করে দিয়েছিল। তবে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক স্বাক্ষরিত একটি পত্র দেখিয়ে কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ডা. মানব রঞ্জন ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, কাজে অনিয়ম হচ্ছে আমরা বুঝতে পেরে ভবনের কাজ বন্ধ করেছিলাম। শিডিউলে লেখা স্টিল শাটার (সেন্টারিং), কিন্তু ঠিকাদার একজন যুগ্ম সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠির কপি দেখিয়ে কাঠের শাটার ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কাঠ দিয়ে কাজ করলে সিমেন্ট পানি বের হবে, কোনোভাবে সেটা ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে স্টিল শাটারের কাজ স্থায়ী হয়। আমরা এলাকাবাসী সঠিকভাবে কাজটি চাই, কোনো চাঁদা চাই না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মো. রেজাউল ফকির জেভি বলেন, সারা দেশে যেভাবে কাজ চলছে আমরাও সেভাবেই করছি। ফরিদপুরে তো আরো কাজ চলমান রয়েছে। কাজের শিডিউলে স্টিলের শাটার ব্যবহার করার কথা ছিল। ডিজি অফিস থেকে কাঠের ব্যবহারের অনুমতিপত্র এনেছি। স্কুল কমিটি কাঠ ব্যবহারে বাধা দেওয়ায় কয়েক দিন কাজটি বন্ধ ছিল। তবে এখন কাজ চালু রয়েছে।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পান্ডে বলেন, ঠিকাদার প্রকল্প অফিস থেকে স্টিলের পরিবর্তে কাঠ ব্যবহারের অনুমতি পত্র এনেছে। আমি ছাড়াও আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কাজটি পরিদর্শন করেছেন। কাজে কোনো অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ নিয়মে কাজ করতে বলা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. তাসারফ হোসেন ফরাজি বলেন, শিডিউলে স্টিলের ব্যবহার উল্লেখ আছে, কিন্তু দুর্গম এলাকায় স্টিল পাওয়া না গেলে বিকল্প হিসেবে কাঠের ব্যবহার করতে পারে। তবে কাঠ ব্যবহার করলে ১০% বিল কেটে রেখে বিল দেওয়া হবে। সিমেন্ট বালু মেশানো পানি বের হলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে স্টিলের শাটার দিয়ে পুনরায় কাজ করতে হবে।