আড়িয়াল খাঁর বুকে মনোমুগ্ধকর নৌকাবাইচ
মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদে এক দৃষ্টিনন্দন নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সদর উপজেলার পাঁচখোলা ইউনিয়নের মহিষেরচর ও জাফরাবাদ এলাকায় স্থানীয়দের আয়োজনে এই আয়োজন করা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৮টি নৌকা অংশ নেয়। প্রতিটি নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন মাঝিকে বৈঠা হাতে দেখা যায়।
নৌকাবাইচে খোয়াজপুর থেকে আসা ‘পঙ্খিরাজ’ নামে নৌকাটি প্রথম স্থান অধিকার করে। এ ছাড়া মাহমুদপুর থেকে আসা বাবু ঢালীর বাচারি নৌকা দ্বিতীয় ও পাঁচখোলা ২নং ওয়ার্ডের নৌকা তৃতীয় স্থান অধিকার করে। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম পুরস্কার হিসেবে ৩৬ ইঞ্চি এলইডি টিভি; দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার হিসেবে ২৪ ইঞ্চি চারটি এলইডি টিভি এবং সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে পিতলের কলস ও মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, মহিষেরচর থেকে জাফরাবাদ দীর্ঘ দুই কিলোমিটার জুড়ে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো নারী-পুরুষ, কিশোর নদীর পাড়ে ভিড় করে। অনেকে আবার নৌকা, ডিঙি নিয়ে এই নৌকাবাইচ উপভোগ করেন। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে কিছুক্ষণের জন্য আড়িখাল খাঁ নদীর পাড় দর্শনার্থীদের ঢলে হয়ে ওঠে এক মিলনমেলা।
খোয়াজপুর থেকে নৌকা নিয়ে আসা জাহাঙ্গীর চৌকিদার বলেন, ‘আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই নৌকাবাইচ। এখানে নৌকা নিয়ে আসতে পেরেছি এটাই বড় আনন্দের। এই ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ দিন দিন আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে। আগামীতেও এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হোক।’
লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে আসা নকুল মণ্ডল বলেন, ‘আমরা খুব আনন্দিত নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে। আমরা এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছি, তাতেই আমাদের সার্থকতা।’
মাদারীপুর শহরের আরিফ হোসেন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘এর আগে এত সুন্দর নৌকাবাইচ দেখিনি। হাজার হাজার মানুষ এসেছেন। আমি ভীষণ আনন্দিত! আমাদের দাবি, এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা সব সময় আয়োজন করা হোক।’
আরেক দর্শনার্থী চায়না শেখ বলেন, ‘আমি মোস্তফাপুর থেকে নৌকাবাইচ দেখতে এসেছি। এত নৌকা আর এত লোক একসঙ্গে কখনোই দেখিনি। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।’
প্রতিযোগিতার আয়োজক স্থানীয় শাহীন ঘরামি বলেন, ‘নৌকাবাইচ বাংলার একটি ঐতিহ্য। এখন এটি বিলুপ্তির পথে। আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং মানুষকে আনন্দ দিতে যুবসমাজ ও মুরুব্বিদের পক্ষ থেকে এই আয়োজন করেছি। আমরা চাই, আগামীতেও যেন এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।’