গরম-যানজট উপেক্ষা করে সদরঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড়
তীব্র গরম ও যানজট উপেক্ষা করে ঈদ উদযাপনে দক্ষিণাঞ্চলগামী মানুষের ভিড় বাড়ছে ঢাকা নদীবন্দর-সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। গরম, যানজট ছাড়াও টিকিটের স্বল্পতা এবং কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য থাকলেও টানা ৬ দিনের ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সদরঘাটে চাপ বেড়েছে নৌপথে ঘরমুখো মানুষের।
শুক্রবার সদরঘাট এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই ইংলিশ রোড ও জনসন রোডে তীব্র যানজট। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। অধিকাংশ মানুষই হেঁটে ছুটছেন টার্মিনালে। বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুরসহ সব নৌরুটের লঞ্চেগুলোতেই তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। নির্বিঘ্নে পৌঁছাতে ও সুবিধা পেতে সময়ের অনেক আগেই উপস্থিত হচ্ছেন অনেক যাত্রী। অধিকাংশ লঞ্চের কেবিনগুলো অগ্রিম বুক হয়ে গেছে। নতুন করে কোনও কেবিন টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যাত্রীদের অভিযোগ কালোবাজারে অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে কেবিন।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার তৈরি পোশাক ও শিল্পকারখানা ছুটি হলে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীর চাপ আরও কয়েকগুণ বাড়বে। ঈদের পরের দিন পর্যন্ত লঞ্চযাত্রায় এই বাড়তি চাপ থাকতে পারে।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে সদরঘাট আসা বরিশালের যাত্রী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গুলিস্তান পর্যন্ত ভালোভাবে আসলেও গুলিস্তান থেকে জগন্নাথ পর্যন্ত এক ঘণ্টার ওপরে লেগেছে আসতে। এই গরমে যানজটে বসে থাকতে কষ্ট হয়েছে অনেক। প্রশাসনের উচিত ঈদের আগে অন্তত এই এলাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।’
মিরপুর ১২ থেকে আসা রেবেকা পারভীন বলেন, ‘আমার লঞ্চ ছাড়বে বিকালে। যানজট এড়াতে সকাল ১১টার আগে পৌঁছেছি। যতই কষ্ট হোক গ্রামে ঈদ করবো, এটাই সবচেয়ে আনন্দের।’
যাত্রীদের ঈদযাত্র নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, কন্ট্রোল রুম স্থাপন, যাত্রীদের নিরাপদে লঞ্চে আরোহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, সার্বক্ষণিক মাইকিং করে নির্দিষ্ট লঞ্চের তথ্য দেওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও নদীবন্দরে পর্যাপ্ত বিশ্রামাঘার, পাবলিক টয়লেট ও পার্কিং সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক শেখ মোহাম্মদ সেলিম রেজা বলেন, ‘যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। কোনও লঞ্চ যেন ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী না নেই, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়াও যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে স্পেশাল সার্ভিসের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।’
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম আলী সরদার বলেন, ‘টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরাও অবস্থান করছেন। পেট্রোলিং, কন্ট্রোল রুম ছাড়াও টার্মিনালের মোট ১৯টি গ্যাংওয়েকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য তিনটি ধাপে ভাগ করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’