ঢাকা আরিচা মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে থ্রি হুইলার!
ঈদ আনন্দ শেষে এবার কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে। দ্রুতগতিতে গন্তব্যে ছুটছে দূরপাল্লাসহ ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের যাত্রীবাহী বাস। আর এসব যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকা আরিচা মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে থ্রি হুইলার।
প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। হাইওয়ে পুলিশের যথাযথ তদারকির অভাবে এসব দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মন্তব্য পরিবহন চালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ঠিক একই সময়ে থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ।
ঢাকা আরিচা মহাসড়কের বারবাড়িয়া ব্রিজের পশ্চিম অংশ থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ৩৭ কিলোমিটার অংশে পড়েছে মানিকগঞ্জ জেলায়। এই মহাসড়ক হয়েই যাতায়াত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের। যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী মোটরসাইকেল আরোহীর সংখ্যা বাড়ছে মহাসড়কে। তবে অবাধে থ্রি হুইলার ও লেগুনার কারণে যত্রতত্র ঘটছে দুর্ঘটনা।
শনিবার (০৭ মে) ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সরেজমিনে মহাসড়কের পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায় থ্রি হুইলার ও লেগুনার আধিপত্য। মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে বানিয়াজুড়ি এলাকা পর্যন্ত দলবেঁধে চলছে লেগুনা। আর বানিয়াজুড়ি থেকে উথুলী পর্যন্ত দেদারসে চলছে থ্রি হুইলার। এমনকি মহাসড়কের টেপড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি চলছে থ্রি হুইলার।
পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় আলাপ হলে দূরপাল্লা যানবাহনের চালক ফয়সাল হোসেন বলেন, থ্রি হুইলার (সিএনজি), ইঞ্জিনচালিত রিকশা এবং লেগুনার চালকেরা অদক্ষ্য ৷ এছাড়া মহাসড়ক এলাকায় তাদের চলাচলও অবৈধ। কিন্তু দেদারসে এসব যানবাহন ঘাট সংলগ্ন এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি চলছে। হাইওয়ে পুলিশের যথাযথ তদারকি থাকলে এসব যানবাহন কোনভাবেই মহাসড়কে উঠতে সাহস পাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মাছ বহনকারী ট্রাক চালক আমিনুর রহমান বলেন, ভোরে মহাসড়কের উথুলী থেকে তরা মাছের আড়ত এলাকা পর্যন্ত সিনএনজি, ইঞ্জিন চালিত ভ্যানের দখলে থাকে মহাসড়ক। কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটলেই বড় যানবাহন মালিককে গুণতে হয় বড় অংকের জরিমানা। চাহিদা মোতাবেক টাকা না দিলেই পড়তে হয় মামলার ঝামেলায়। হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে আঁতাত না থাকলে কিভাবে এসব অযান্ত্রিক যান মহাসড়কে চলাচল করে বলে প্রশ্ন করেন তিনি।
মহাসড়কের পল্লীবিদ্যুৎ মুলজান এলাকায় আলাপ হলে ঢাকামুখী মোটরসাইকেল চালক মেহেদি মুস্তাকিন বলেন, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের অবস্থা খুবই ভালো। অল্প সময়েই ঢাকা থেকে বাড়ি (ফরিদপুরে) যাওয়া যায়। যে কারণে গেলো তিন বছর ধরে নিয়মিতভাবে তিনি তার এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল করে বাড়ি যান। মহাসড়ক এলাকায় থ্রি হুইলার বেশ বড় একটি আতঙ্ক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মহাসড়কের টেপড়া এলাকায় আলাপ হলে একাদিক থ্রি হুইলার চালক বলেন, সাংবাদিকরা নিউজ করলেই হাইওয়ে পুলিশ ঝামেলা করে। থ্রি হুইলার আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কখনো টাকা পয়সা আবার কখনো মুচলেকা দিয়ে সিএনজি এবং ইঞ্জিন চালিত রিকশা আনতে হয়ে। মহাসড়ক এলাকায় ঝুঁকি থাকলেও আয় বেশি। এছাড়া একটু ম্যানেজ করে চললে কোন ঝামেলা হয় না বলে মন্তব্য করেন একাদিক সিএনজি চালকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন বলেন, মহাসড়কে থ্রি হুইলার আইনগতভাবে চলাচলের কোন সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হাইওয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে আলাপ করার জন্য পরামর্শ দেন তিনি।
বরঙ্গাইল হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকির হোসেন বলেন, থ্রি হুইলার চলাচলের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলামান রয়েছে। এখন মহাসড়কে কোন থ্রি হুইলার চলে না। মহাসড়কে আজ অনেক থ্রি হুইলার সরেজমিনে চলতে দেখা গেছে বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) আব্দুল কাদের জিলানি বলেন, মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলাচলের কোন সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।