দুই বালুমহালের মূল্য সংশোধনে হাইকোর্টের আদেশ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার দুটি বালুমহালে মজুত বালুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইজারার সরকারি মূল্য নির্ধারণের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে জেলা প্রশাসনকে আদেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মামনুন রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দিলিরুজ্জামানের দ্বৈত বেঞ্চ রোববার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে আদেশ পরিপালনে বলা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সৈবুর রহমান নামে একজন বালু ইজারাদারের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্জ এ আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২৩ আগস্ট পদ্মার দুটি বালুমহালের দ্বিতীয়বারের মতো টেন্ডার জমাদানের শেষ দিন রয়েছে। এ আদেশের ফলে বালুমহাল দুটির টেন্ডার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখতে হবে।
রিটকারী এসআর এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. সৈবুর রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার এসএম আতিকুর রাহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, এসআর রনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সৈবুর রহমান গত ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসক চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দেওয়া এক আবেদন জমা দিয়ে পদ্মার মালবাগডাঙ্গা ও বাখর আলী-চরবাগডাঙ্গা বালুমহাল দুটিতে মজুত বালুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ শেষে ইজারা প্রক্রিয়া চালু দাবি করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন তা আমলে নেননি। এ কারণে তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেন।
রিটকারী আরও বলেন, গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নতুন বছর ১৪২৮ সালের প্রথম দিন ছিল। তবে দুই মাস পরে জুন মাসে পদ্মার এই দুটিসহ মোট তিনটি বালুমহালের প্রথম দফা ইজারা ডাকা হয়েছিল। ওই সময় তিনি সূর্যনারায়ণপুর বালুমহালটি সর্বোচ্চ এক কোটি ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ইজারা পান, যার সরকারি মূল্য ছিল মাত্র ২৭ লাখ টাকা।
ইজারা পেলেও দুই মাস পর গত ১৮ আগস্ট তিনি বালুমহাল বুঝিয়ে পান। নিয়মানুযায়ী ইজারা সময়কালের পাঁচ মাস ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে বাকি দুটি বালুমহালের দ্বিতীয় দফা টেন্ডার ডাকা হয়েছে চলতি আগস্ট মাসে। তবে ইজারা সময়কালের পাঁচ মাস অতিক্রান্ত হলেও সরকারি মূল্য সংশোধন না করেই আগের মূল্যই রাখা হয়েছে। এ কারণে রিটকারী বালুমহাল দুটির ইজারা মূল্য সময়কাল হিসাব ও মজুত বালুর সঙ্গে মূল্য সংশোধনের আবেদন করেন।
রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার এসএম আতিকুর রাহমান বলেন, পাঁচ মাস আগে বালুমহাল দুটির যে সরকারি মূল্য ধরা হয়েছিল, পাঁচ মাস পরও একই মূল্য ধরা যুক্তিসঙ্গত আবার আইনসম্মতও নয়। এ কারণে আমরা বালুমহাল দুটিতে এখন কী পরিমাণ বালু মজুত রয়েছে, তার হাইড্রোলজিক্যাল সার্ভে করে পুনরায় মূল্য নির্ধারণের আর্জি করেছিলাম আদালতে। মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চ মূল্য সংশোধনের পর পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির আদেশ দিয়েছেন।
এদিকে রিটকারী আরও বলেন, তিনি সূর্যনারায়ণপুর নামে যে বালুমহালটির ইজারা পেয়েছেন, তাতে বালু মজুত দেখানো হয়েছে ৯৯ হাজার ঘনমিটার। এর সরকারি মূল্য ছিল ২৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে মালবাগডাঙ্গা বালুমহালের বালু মজুতের পরিমাণ দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৯৯ হাজার ঘনমিটার এবং মূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৯৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে বাখর আলী কাম চরবাগডাঙ্গা বালুমহালে মজুত ছয় লাখ ৩৯ হাজার ঘনমিটার বালুর বিপরীতে মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। বালু মজুতের সঙ্গে তিনটি বালুমহালের সরকারি মূল্যে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। আগের মূল্যে পাঁচ মাস পর ইজারা হলে এবং মজুত বালুর সঙ্গে মূল্যের বড় অসঙ্গতি সংশোধন না করে ইজারা হলে ইজারাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এদিকে আদালতের আদেশ হাতে পেলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ।