মহেশখালীতে রাতভর হেফাজতের তাণ্ডব, আটক হলেন ছাত্রদল নেতা
হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হক ইস্যুতে মহেশখালীতে দফায় দফায় লাঠি মিছিল, থানা, উপজেলা পরিষদ ও আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নাম উল্লেখ না করে মামলা হয়েছে ৩০০ জনের নামে। আটক করা হয়েছে এক ছাত্রদল নেতাকে।
অভিযোগে জানা যায়, শনিবার রাত ১০টার দিকে কালারমার ছড়ায় উত্তরনলবিলায় বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমণের চেষ্টা করা হয়। কালারমার ছড়ায় যুবলীগ নেতার ওপর হামলা, তার বাড়ি ভাংচুর, বড় মহেশখালীতে আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরে মিছিল থেকে উপজেলা পরিষদে ইট নিক্ষেপ করে জানালা ভাংচুর ও থানায় হামলা করা হয়। পুলিশকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে। আহত হয়েছেন একাধিক পুলিশ সদস্য।
পুলিশ সূত্র জানায়, হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ‘অবরুদ্ধ’ হয়েছেন— এমন খবর মহেশখালী এসে পৌঁছালে হেফাজতের ব্যানারে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। গ্রাম এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে বাজার এলাকায় জড়ো হয়। রাত ১২টার কিছু সময় পর একটি বিশাল লাঠি মিছিল বড় মহেশখালী থেকে উপজেলা সদরে আসে, মিছিলটি পৌর শহরের গোরকঘাটা বাজার থেকে সড়কের দু’পাশে ভাঙচুর চালিয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকায় যায়, উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের জানালা ভাঙচুর করে।
পুলিশ জানায়, এ সময় মূল ফটক বন্ধ পেয়ে সরকারি কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে তারা। পরে মিছিলটি মহেশখালী থানার সামনে গিয়ে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে স্লোগান দিতে থাকে। ফটক বন্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে ভাঙচুর চালায়। মিছিলটি প্রধান সড়ক ধরে বড় মহেশখালী ফেরার পথে পালপাড়া এলাকায় সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন হিন্দু বাড়িতে হামলা করে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, মিছিলকারীরা বড় মহেশখালী বাজারে পৌঁছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজ মিয়া বাশির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা করে এবং আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তাণ্ডব চালায়। তারা কার্যালয়ের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে আসবাপত্র বাইরে নিয়ে এসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, এ ছাড়া মহেশখালীর উত্তর অংশ কালারমার ছড়া এলাকায় একই কায়দায় বিক্ষোভকারীরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে ওই এলাকায় একটি ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশের একাধিক ইউনিট ওই এলাকায় গেলে মিছিলকারীরা দু’দিক থেকে পুলিশকে ঘিরে ফেলে হামলা করে। পুলিশ ছয় রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
অভিযোগে জানা যায়, ওই এলাকায় বিক্ষোভকারীরা স্থানীয় যুবলীগ নেতা কলিমুল্লাহ হাসান মুন্নার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লোকজনকে পিটিয়ে আহত করে।
এ সব ঘটনায় রাতেই মহেশখালী থানা পুলিশ বাদী হয়ে প্রায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তারেক রহমান জুয়েলকে আটক করেছে পুলিশ।
এ বিষয়ে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। পুলিশ যে কোনো উপায়েই এমন জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করবে। এ সব ঘটনায় সম্পৃক্তদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মহেশখালী-কুতুবদিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহেদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে মহেশখালীতে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে। সমগ্র বিষয়টিকে কঠোরভাবে দেখছে পুলিশ।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহাফুজুর রহমান জানান, মহেশখালীতে হেফাজত নেতা মামুনুল হক ইস্যুতে যে বা যারা তাণ্ডব চালিয়ে সরকারি অফিস, জনমালামালসহ হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।