মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর ১৭ বছর এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াতেন তিনি
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাদণ্ড পাওয়া সিরাজুল ইসলাম (৪০) নামের এক আসামিকে ১৭ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তিনি গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন।
বুধবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর এলাকা থেকে র্যাব সিরাজুলকে গ্রেফতার করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাব-৪ এর সিপিসি-৩ মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরিফ হাসান সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতার সিরাজুলের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বারাহির চর গ্রামে। তবে তিনি জামিনে বের হয়ে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে আড়াল করতে সিরাজ নাম ধারণ করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার চর সৈয়দপুর গ্রামকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তবে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মানিকগঞ্জ সদরের বাড়াইল চর ব্যবহার করেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে প্রায় দেড় যুগ ধরে তিনি পলাতক ছিলেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, ২০০২ সালের জুলাই মাসে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জামশা গ্রামের আবদুল জলিলের মেয়ে জুলেখা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে তাকে বেশকিছু নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার এবং আসবাব দেওয়া হয়। এরপর আরও যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রীকে সিরাজুল মারধর করতেন। এ নিয়ে সালিশ-বৈঠক হলে সিরাজুল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।
২০০৩ সালের ৬ ডিসেম্বর পূর্বপরিকল্পিতভাবে সিরাজুল শ্বশুরবাড়ির অদূরে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে কালীগঙ্গা নদীর পাড়ে নিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এতে তিনি স্ত্রীকে হত্যার সঙ্গে আট মাসের গর্ভের সন্তানও হত্যা করেন। পরের দিন পুলিশ নিহত জুলেখার লাশ উদ্ধার করে এবং পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
এ ঘটনায় ওই দিন (২০০৩ সারের ৭ ডিসেম্বর) নিহত জুলেখার বাবা আবদুল জলিল বাদী হয়ে সিরাজুলসহ তার বড়ভাই রফিকুল ইসলাম, মা রাবেয়া বেগম, খালু শামসুল ইসলাম, দুই চাচা মো. ফাইজুদ্দিন ও মো. তাইজুদ্দিন এবং মামা আবুল হোসেনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ আসামি শামসুলকে গ্রেফতার করলে তিন মাস পর জামিনে বের হন।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামি সিরাজুল, রফিকুল, রাবেয়া এবং শামসুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। এজাহারনামীয় বাকি তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে আদালতে মামলার বিচারকাজ চলে।
২০০৫ সালে সাক্ষ্য ও প্রমাণাদির ভিত্তিতে জুলেখাকে হত্যার দায়ে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মো. মোতাহার হোসেন সিরাজুলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। একই সঙ্গে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর তিন আসামিকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
র্যাব-৪ এর সিপিসি-৩ মানিকগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আরিফ হাসান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আসামি সিরাজুল প্রায় দেড় যুগ পলাতক ছিলেন। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে রেজাউল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে রিকশা চালানোসহ দিনমজুরের কাজ করতেন। গোয়েন্দা নজরদারি ও গোপন অনুসন্ধানের মাধ্যমে বুধবার তাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪-এর দল একটি দল। এরপর তাকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেফতার আসামিকে সিঙ্গাইর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।