মেলায় নারীদের গ্যালারিতে প্রবেশে বাঁধা দেয়ায় শিক্ষককে হত্যা চেষ্টা
স্বাধীনতা দিবসে মেলা উপলক্ষে আয়োজিত ডিজিটাল কনসার্টে বখাটেদের নারী গ্যালারীতে প্রবেশে বাঁধা দেওয়ায় এক কলেজ শিক্ষক ও পুলিশসহ ৭ জন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাঘায়। এ ছাড়া রাস্তা অবরোধ করে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাঘাগামী সুপার সনি যাত্রীবাহী বাসের সামনের ও পাশের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়েছে। সোমবার (২৯ মার্চ) দুপুরে উপজেলার চন্ডিপুর বাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এক নারীসহ ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
আয়োজকরা জানায়, উপজেলার চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুইদিন ব্যাপী মেলা ও ডিজিটাল কনসার্টের আয়োজন করা হয়। গত ২৭ মার্চ রাতে দর্শক সারির উচ্ছৃঙ্খল কিছু যুবক নেশাগ্রস্থ অবস্থায় নারীদের গ্যালারীতে প্রবেশের চেষ্টা করলে শৃঙ্খলা রক্ষায় আয়োজক কমিটির সদস্যরা তাদের বাঁধা দেয়। তবুও তারা শক্তি প্রয়োগ করে প্রবেশ করতে যায়। তাদের অসদাচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে কমিটির লোকজন মিলে বাঘা গ্রামের নয়ন ও রাব্বিকে চড় থাপ্পড় দিয়ে সেখান থেকে বের করে দেয়। এর জের ধরে পরের দিন রোববার (২৮ মার্চ) স্থানীয় একটি ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাবার পথে উপজেলা সদরে মাজার গেট এলাকায় পথরোধ করে চন্ডিপুর গ্রামের অন্তর আলী নামের এক তরুণকে মারধর করা হয়। এই ঘটনায় ঐ তরুণের মা বাদি হয়ে মিলিকবাঘা গ্রামের দুই যুবক, রবি ভাণ্ডারীর ছেলে মোহাম্মাদ রাব্বি (২০) রফিকুল ইসলামের ছেলে নয়ন আলী (২০) ও চন্ডিপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা (২৮) এর বিরুদ্ধে লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মারপিট করে ৯৫ হাজার টাকার ব্যাগসহ ২২ হাজার টাকা মূল্যের দু’টি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে।
সোমবার (২৯ মার্চ) দুপুরে একই ঘটনার জের ধরে চন্ডিপুর গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে আব্দুল গণি কলেজের শিক্ষক আরিফুল ইসলামকে জোতরাঘব কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকায় তাকে লোহার রড়, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে আগের অভিযুক্তরাসহ ৬/৭ জনের একটি দল। কলেজ শিক্ষককে মারপিট করার ঘটনাটি জানাজানি হলে চন্ডিপুর বাজার এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তা অবরোধ করে সুপার সনি (ঢাকা মেট্রো ব ১৫-৫২৫১) একটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি থ্রি হুইলার(সিএনজি) ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এ সময় কনস্টেবল সাগর, বিদ্যুৎ, রিপা, ডিএসবি’র এসআই নুরুজ্জামান, স্থানীয় মোশারফ হোসেন, আরিফুল ইসলাম, বাসের ড্রাইভার সাইফুল ইসলাম আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন বড় ছয়ঘটি গ্রামের মিলন হোসেন (৪০), শরিফুল ইসলাম (৪২), বাবুল হোসেন (৪৫), সাব্বির হোসেন (২৭)।
মেলা ও ডিজিটাল কনসার্ট আয়োজক কমিটির সভাপতি ও বাজুবাঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান জানান, বাঘা সদরের কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণে হামলার শিকার হয়েছে কলেজ শিক্ষকসহ কয়েকজন। যার জের ধরে এলাকার বিক্ষুব্ধ জনতা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। দলীয় সূত্রে নয়ন আলী, রাব্বিসহ অন্যরা বাঘা পৌর আ.লীগের এক নেতার মদদপুষ্ট বলে জানা গেছে। অভিযোগ আছে রাব্বি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। রাব্বি মাদক ব্যবসায়ী সঙ্গীদের নিয়ে স্কুল শিক্ষক আরিফুল ইসলামের শরীরে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।
শিক্ষক আরিফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। পাশাপাশি খুন করবে বলে শরীরে আঘাত করছিল।
এদিকে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আব্দুল বারী ঘটনার সত্যতা শিকার করে বলেন, এই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। একটি পুলিশের পক্ষ থেকে আর একটি ভুক্তভোগী জনগণের পক্ষ থেকে।