হরতাল ঘিরে সতর্কাবস্থায় বিজিবি-পুলিশ-র্যাব
হেফাজতে ইসলামের হরতাল ঘিরে রোববার ঢাকাসহ দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ ও র্যাব। এ ছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। হরতাল ঘিরে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হলে শক্তভাবে প্রতিহত করবে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হবে না। সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, শনিবার হাটহাজারীতে হেফাজতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে স্থানীয় এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও সরকারের সংশ্নিষ্ট প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, রোববার শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচি পালন শেষে মাদ্রাসার শিক্ষকরা ছাত্রদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাবেন। তারা কোনো সহিংসতায় জড়াবে না। হরতালের সময় রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া হলে কর্মসূচি শেষে তা ছাত্ররাই তুলে নেবে।
হেফাজতের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে সমর্থন জানিয়েছে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনসহ অধিকাংশ ধর্মভিত্তিক দল। নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। হরতালকে যৌক্তিক বললেও সমর্থন জানায়নি বিএনপি। হরতাল প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীতে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
শনিবার সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে দূরপাল্লার বাসও চলবে। এদিকে হরতালের আগের দিন রাতে যাত্রাবাড়ীতে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে কে বা কারা আগুন দিয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
একাধিক জেলার পুলিশ সুপার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। হেফাজতের কর্মসূচিতে যাতে তৃতীয় কোনো পক্ষ ঢুকে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার হাটহাজারীতে হেফাজতের তাণ্ডবের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা যুক্ত ছিল। হাটহাজারীর কাচারি সড়কে শিবিরের শতাধিক কর্মী জড়ো হয়। প্রথমে হেফাজত নৈরাজ্য শুরু করে। এরপর তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল।
বিভিন্ন সময় যেসব জেলায় মৌলবাদী গোষ্ঠী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে মাঠ প্রশাসনকে কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা দফায় দফায় যোগাযোগ রাখছেন। বাড়তি কোনো ফোর্স প্রয়োজন কিনা, তাও জানতে চাওয়া হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, হরতাল ঘিরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটালে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করবে র্যাব। দেশের ভাবমূর্তি ও জনগণের জানমালের ক্ষতি হয়, এমন কিছু করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, হরতাল ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিআইডির সাইবার সেন্টার, ডিবি, সিটিটিসিসহ পুলিশের প্রায় সব ইউনিটের সাইবার মনিটর সেন্টার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নজর রাখছে। কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেখলেই পুলিশের অপারেশনাল ইউনিটকে অবহিত করা হচ্ছে।
নরসিংদী জেলার এক দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল কর্মসূচি পালনের জন্য সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে এরই মধ্যে কয়েক দফায় নানা পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়। তারা পুলিশের বার্তা পেয়েছেন। হরতাল আহ্বানকারীরা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। মোদিবিরোধী ইস্যু ঘিরে ওই জেলায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। ‘নরম-গরম’ নীতি নেওয়া হয়েছে। নরম নীতি প্রয়োগ করেই সেখানে ভালো ফল এসেছে। গরম নীতি প্রয়োগ করার প্রস্তুতিও আছে তাদের। এ ছাড়া বিট পুলিশ সদস্যদেরও সক্রিয় করা হয়েছে।
আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি কায়দায় হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর, আগুন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে হামলা মেনে নেওয়া যায় না। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মাদ্রাসাছাত্রদের উস্কে দিয়ে তাণ্ডব সৃষ্টিকারীরাও ছাড় পাবে না।
আরেকটি সূত্র জানায়, মোদিবিরোধী ইস্যুকে কেন্দ্র করে আগেই থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি ছিল কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, নিরাপত্তা প্রস্তুতির দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কম হতো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরেক কর্মকর্তা জানান, অতীতে গুজব ছড়িয়ে দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানো হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখার কথা প্রচার করে বড় ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়। এ ছাড়া ঢাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ও ছড়ানো হয় ভয়ংকর সব গুজব।
এবার মোদিবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালেও বায়তুল মোকাররম এলাকায় শুক্রবার কয়েকজন নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালানো হয়। গুজব ছড়ানো আইডিগুলোর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে সাইবার মনিটরিং বিভাগ।
মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে সংঘাতের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবারই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রোববারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি সদস্যরা মাঠে থাকবেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান বলেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিজিবি দায়িত্ব পালন করবে।