হোটেল বুকিংয়ে প্রথম স্ত্রীর নাম লিখেছেন মামুনুল
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের কক্ষ ভাড়ার সময় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নিজের নাম সঠিক লিখলেও তার সঙ্গীনির নাম লুকিয়েছেন। সেই নারী নিজের নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা লিখলেও মামুনুল রিসোর্টের নথিতে তার উল্লেখ করেছেন আমেনা তাইয়্যেবা। তবে তাইয়্যেবা তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর নাম।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুনতে পেরেছি তার (মামুনুল) আসল স্ত্রীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা। বিষয়টির তদন্ত করছি।’
শনিবার বেলা দুইটার দিকে সাদা রঙের একটি গাড়ি নিজেই চালিয়ে রিসোর্টটিতে যান মামুনুল। ভাড়া করেন এক্সিকিউটিভ ডিলাক্স (সেমি সুইট) কক্ষ। এই কক্ষগুলোর ভাড়া এমনিতে ১০ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আর ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয়। তবে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ডিসকাউন্ট করে মামুনুল হককে সাত হাজার টাকায় ভাড়া দেয়।
রিসোর্টের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ বকুল বলেন, অভ্যর্থনার কর্মীরা মামুনুলের কাছে তার সঙ্গীনির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেছেন তার স্ত্রী, নাম আমেনা তাইয়্যেবা। মামুনুল কক্ষ ভাড়া করার সময় নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপিও জমা দেন। হেফাজত নেতা ১২ ঘণ্টার জন্য ভাড়া করে যান ৫০১ নম্বর কক্ষটি। সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর মামুনুল খাবারের অর্ডার করেন। এরপর সাড়ে পাঁচটার দিকে শুরু হয় হাঙ্গামা।
স্থানীয় যুবকরা মামুনুলকে ঘিরে ঘরে যখন একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তখন তিনি ওই নারীর পরিচয় দেন আমেনা তাইয়্যেবা। বলেন তার শ্বশুরবাড়ি খুলনায়, শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম। তবে তার এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে সেই মেয়ের বক্তব্যে। তিনি নিজের নাম বলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। বাবার নাম লেখেন ওলিয়র রহমান। বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
৬ থেকে ৭ বছরের মধ্যে রিসোর্টটি সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘরের আধা কিলোমিটার এলাকায়। জাদুঘর ঘুরতে আসা লোকজন ছাড়াও সেখানে প্রায়ই মানুষ ঘুরতে যায়। মামুনুল যখন বেকায়দায় পড়েন, তখন তাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তারা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে জড়ো করে হামলা করে রিসোর্টে। ব্যাপক ভাঙচুর করে ছিনিয়ে নেয় মামুনুল হককে।
ফাঁস হওয়া কথোপকথনে অনেক প্রশ্ন: দুইজনের তথ্যে নানা অনিয়মের পর রাতে তিনটি মোবাইল কথোপকথনের অডিও ফেসবুকে ফাঁস হয়। এর একটিতে বোঝা যায় মামুনুল তার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেখানে মামুনুল হক তার স্ত্রীকে ওই নারীর পরিচয় হিসাবে শহীদুল ইসলাম নামে একজনের স্ত্রী বলে জানান। বাসায় গিয়ে পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করার কথাও বলেন এবং স্ত্রীকে আগে থেকে ‘সব জানি বলে’ মিথ্যা কথা বলার পরামর্শ দেন। ফোনালাপ (হুবহু) :
মামুনুল হকের স্ত্রী : আসসালামু আলাইকুম
মামুনুল হক : ওলাইকুম সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। পুরা বিষয়টা আমি তোমাকে সামনে আইসা বলবো। ওই মহিলা যে ছিল সাথে সে হইলো আমগো শহীদুল ইসলাম ভাইয়ের ওয়াইফ। বুঝছো? ওইটা নিয়া এমন একটা, মানে অবস্থা এরকম তৈরি হইয়া গেছে যে এই কথা বললে তারা ওখানে, মানে ই কইরা ফেলছিল আমাকে।
মামুনুল হকের স্ত্রী : আচ্ছা, বাসায় আসেন, তারপর যা বলার তারপর বইলেন।
মামুনুল হক : বলুম তো। তুমি বিষয়টা মানে অন্যান্য কথা বলতে হইবো, পরিস্থিতিটা এমন হইয়া গেছে। এখন এই জন্য তুমি আবার মাঝখান দিয়া অন্য কিছু মনে কইরো না। তোমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে ‘তুমি বইলো হ্যাঁ আমি সব জানি।’ এই রকম কিছু একটা বইলো।
মামুনুল হকের স্ত্রী : ঠিক আছে।
মামুনুল হক : আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম।
পরে আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যা মামুনুলের সঙ্গে তার রিসোর্টের সঙ্গীনির মধ্যকার বলে প্রতীয়মান হয়। সেখানে সেই নারী জানান, তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার মায়ের একটি বন্ধ মোবাইল নম্বর দিয়েছেন। আর অন্য একজন যখন তাকে কোথায় বিয়ে হয়েছে জিজ্ঞেস করেছে, তখন তিনি বলেছেন, এটা জানেন না। মামুনুলের সঙ্গে কথা বলে নেবেন।
আরও একটি কথোপকথনে বোঝা যায় মামুনুলের বোন কথা বলেছেন হেফাজত নেতার চার সন্তানের জননী স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি তাকে বুঝিয়েছেন, কেউ যদি তাকে ফোন করে, তাহলে তিনি যেন বলেন, তিনি বিয়ের অনুমতি দিয়েছেন এবং তার শাশুড়ি এই বিয়ের আয়োজন করেছেন। এরপর মামুনুল ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তিনি বিয়ে করেছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীকে। পারিবারিকভাবেই এই বিয়ে হয়েছে।
পরদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি একে একটি মানবিক বিয়ে উল্লেখ করে লেখেন, সেই নারীর সঙ্গে তার স্বামীর ছাড়াছাড়ির আগে তিনি সংসার ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর মেয়েটি দুর্দশায় পড়ে যায়। সে সময় তিনি বিয়ে করে নিয়েছেন তাকে।