৩ কোটির সেতু, সংযোগ সড়ক শেষ হলো কৃষিজমিতে! গা বাঁচাতে তৎপর প্রকৌশলী
সংযোগ সড়ক নেই, অথচ প্রায় তিন কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। সেতুর এক পাশে সড়কের সংযোগ থাকলেও অন্য পাশে ফসলি জমি। তবু খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এ সেতু। সেতুর এক প্রান্তে কোনো সড়ক না থাকায় বর্তমানে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না।
ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের আনুজানি গ্রামের পাশের চেলাখালের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এই সেতুর অবস্থান। এই সেতু নির্মাণের পেছনে আনুজানি গ্রামের এক বিশিষ্ট ব্যক্তির ভূমিকা আছে বলে জানান গ্রামবাসী। সেতুর দক্ষিণ পাশে সড়কের পরই ওই বিশিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি।
জানা যায়, খালের দক্ষিণে আনুজানি গ্রাম, উত্তরে ফসলি জমি ও চেরা বিল। বিলের পাড়ে মইনপুর ও কুরশি গ্রাম। চেলা খালের ওপর এই সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় তিন বছর আগে। গ্রামের পাশের সড়ক যুক্ত করে সেতুটি খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৬ মিটার, প্রস্থ সাড়ে ৭ মিটার। কিন্তু সেতুর অপর প্রান্তে কোনো সড়ক নেই। সংযোগ সড়কের পরই জমি। আলপথ ছাড়া সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই সেখানে।
এখানে সরকারের তিন কোটি ২৪ লক্ষ টাকা গচ্ছা গেছে। এমন সংবাদ দেশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকা ও বেসরকারি টেলিভিশনে প্রকাশ হলে টনক নড়ে ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী আবুল মনসুর মিয়ার।
তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও ফেইসবুক পেইজে দৃষ্টিনন্দন সেতুতে আশার আলো ছড়িয়েছে এলাকায় এমন সংবাদ প্রকাশ করাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও এসব সংবাদ বারবার শেয়ার করে নিজের গা বাঁচানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। এসব নিয়ে গোটা উপজেলা জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সেতু সম্পর্কে আনুজানি গ্রামের আব্দুর রহিম জানান, ব্রিজ তো অইয়া গেছে। ওখন রাস্তা অয়র না। রাস্তা নাইতে ব্রিজ কোন কাম লাগবনি।
আনুজানি ও আশপাশের গ্রামের কয়েকজন লোক জানিয়েছেন, সেতুটির এখন এখানে প্রয়োজন ছিল না। বরং এ সেতু থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আলীগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে চেলা খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। সেখানে সেতু হলে মঈনপুর ও কুরশি গ্রামের মানুষও ওই দিকে যাতায়াত করতে পারত। এখন তৈরি করা নতুন সেতুর সঙ্গে ওই দুই গ্রামের সংযোগ দিতে হলে এক দিকে তিন কিলোমিটার, অন্যদিকে চার কিলোমিটার সড়ক করতে হবে।
ভাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য আবদুন নূর বলেন, সেতুর উত্তর পাড় থেকে দুটি গ্রামে যাতায়াতের জন্য সড়ক নির্মাণ করতে হবে। সড়ক না হলে সেতু কোনো কাজে আসবে না।
এলজিইডির ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী মো. আবুল মনসুর মিয়া বলেন, অনেক স্থানে এ রকম হয়। দেখা গেছে, আগে সেতু হওয়ায় পরে সড়কের কাজ গুরুত্ব দিয়ে করা হয়েছে। সেতুটির উত্তর পাশে সড়ক করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে।